September 18, 2024

ফরিদপুরে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদেও সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ আহত ১৫


স্টাফ রিপোর্টার : ফরিদপুরে পূর্ব ঘোষিত ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভকারিদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে পৌনে বারোটা পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়। এসময় সাংবাদিক, পুলিশ ও আন্দোলন কারি সহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছে। এর আগে শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে বিক্ষোভের ডাক দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল থেকেই ওই এলাকায় আওয়ামী লীগ ও শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে লাঠিশোটা নিয়ে অবস্থান নেয়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অবস্থান নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বেলা ১১টার সময় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় ক্যাম্পাসে এ সময় সেখানে আরো কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা একাত্মতা প্রকাশ করে সমবেত। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে শহরের ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে যাওয়া চেষ্টা করে। এসময় গোয়ালচামট মডেল মসজিদের সামনে ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ প্রথমে আন্দোলনকারীদের থামানোর চেষ্টা করেন। এরপরই সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ারশেল মারতে শুরু করে। পাল্টা বিক্ষোভকারীরাও ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। এ সময় পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ মুহুমূর্ছ গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের দিকে। এক পর্যায়ে সেখানে রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। প্রায় আঁধা-ঘন্টাব্যাপি ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দিয়ে পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় গিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা মেডিকেল কলেজ এলাকায় ঢুকে পড়ে। সেখানেও তাঁদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এসময় বিক্ষোভকারিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করলে পুলিশও পাল্টা টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে বিক্ষোভকারিরা পিছু হঠে যায়। আন্দোলন কারীরা বলছেন, তারা নিরস্ত্র ছিলেন। ¯েøাগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে সামনে এগোনোর সময় প্রথমে আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা করে। এসময় তারা রাস্তার পাশে ইট-খোয়া দিয়ে তাদের প্রতিরোধ করেন। এসময় তারা পালিয়ে গেলে ভাঙ্গা রাস্তার মোড় হতে পুলিশ তাদের দিকে প্রথমে টিয়ারগ্যাস এবং পরে রাবার বুলেট ছুঁড়ে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে এতে রনি নামে একজনের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহত আন্দোলনকারী আহাদুজ্জামান রনি বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলটি ভাঙা রাস্তার মোড়ে অবস্থান করতে চাইলে, পুলিশ ও ছাত্রলীগ আমাদের উপরে গুলি বর্ষন এবং ইটপাটকে নিক্ষেপ করে, এতে আমরা অনেকেই আহত হই। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১০ আহত হবার খবর পাওয়া গেছে। এদিকে এ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন আরেক সঞ্জয় বৈরাগী নামে এক নার্সিং শিক্ষার্থী। বর্তমানে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শরীরে ১৮টি রাবার বুলেটের আঘাত রয়েছে বলে কর্তব্যরত সিনিয়র নার্স আফসানা আফরোজ জানিয়েছেন। আহত এই শিক্ষার্থী বলেন, আমি বিক্ষোভে গিয়েছিলাম। মিছিলটি ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ের দিকে গেলে পুলিশের পাশ থেকে আওয়ামী লীগের লোকজন ইটপাটকেল মারতে শুরু করে। এরপরই পুলিশ মুহুর্মুহু গুলি ছুড়তে শুরু করে। আমার শরীরে ১৮টি রাবার বুলেটের আঘাত রয়েছে। এদিকে, সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে কয়েকজন গনমাধ্যমকর্মিও আহত হন। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহীনির সদস্যরা অবস্থান নিয়ে টহল ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছেন। তবে রাস্তা ফাঁকা থাকায় যানবাহন চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। তাছাড়া খুব একটা লোকজনকে রাস্তায় দেখা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *